বানর ও মানুষ
ড. মো: আবুল হাসান
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বানর স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা স্থলভাগে ও বৃক্ষ শাখায় বাস করে। এরা Mammalia শ্রেণিভুক্ত। বানর ছাড়াও এই শ্রেণীতে আছে হাতি, হনুমান, উল্লুক, ভাল্লুক, কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, চিকা, সজারু, বাদুর, চামচিকা, বিড়াল, বাঘ, ভোঁদর, খাটাশ, নকুল, কুকুর, খেঁকশিয়াল, শেয়াল, ঘোড়া, গণ্ডার, শিম্পাঞ্জি, গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ, তিমি প্রভৃতি প্রাণী।
পৃথিবীতে এখনো ২৩ প্রজাতির বানর আছে, বাংলাদেশে আছে পাঁচ প্রজাতির। বড় একটি বানরের ওজন ৯-১৪ কেজি, স্ত্রী বানর অপেক্ষাকৃত ছোট ও কম ওজনের। এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। প্রজাতি ভেদে স্ত্রী বানর তিন-চার বছর বয়সেই প্রজনন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। গর্ভধারণকাল প্রায় সাত মাস। বানর সৃষ্টি মানুষ সৃষ্টির অনেক আগে।
মানুষ থেকে রূপান্তরিত বানর: আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে করার কারণে আল্লাহ কেবল একটি নির্দেশের মাধ্যমে সীমা লঙ্ঘনকারীদের লাঞ্ছিত বানর করে দিলেন। পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ৬৫ নং আয়াত, সূরা মায়েদার ৬০ নং আয়াত ও সূরা আ’রাফের ১৬৬ নং আয়াত লক্ষণীয়। একই ঘটনা ভিন্ন তিনটি প্রেক্ষাপটে তিন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি হজরত দাউদ আ:-এর সময়কার। তখন বনি ইসরাইলিদের জন্য শনিবার ছিল পবিত্রতম দিন ও উপাসনার দিন। এই দিন মাছ ধরা নিষেধ ছিল। এই নিষেধ অমান্য করে যারা মাছ ধরেছিল আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত বানর করে দেন। এই রূপান্তরিত বানরগুলো দুই-তিন দিনের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান বানরের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই।
মানুষ: মানুষ উন্নত স্তন্যপায়ী প্রাণী। সৃষ্টির প্রথম মানুষ হজরত আদম আ:, যাকে আল্লাহ নিজে তৈরি করেছিলেন মাটি দিয়ে। আদম আ: থেকে ক্লোনাল পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেন প্রথম মহিলা বিবি হাওয়া। তাঁদের দু’জন থেকে সৃষ্টি করেন স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী সব মানুষ। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, আমি মানুষকে তৈরি করেছি সুন্দরতম অবয়বে (বানরের মতো করে নয়)। (সূরা ত্বিন) পৃথিবীর সব মানুষের আদি পিতামাতা হজরত আদম আ: ও বিবি হাওয়া আ:। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে মানুষ অত্যন্ত উন্নত জীব, অন্য কোনো জীব প্রজাতির সাথে মানুষের তুলনা হয় না।
বানর থেকে কিভাবে মানুষ হবে: বানরের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪২, মানুষের ৪৬; বড় বানরের ওজন ১৪ কেজি পর্যন্ত, পূর্ণাঙ্গ মানুষের ওজন ৬০-১০০ কেজি; স্ত্রী বানর তিন-চার বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়, মেয়ে মানুষ কোনো সময়ই ১৩ বছরের আগে প্রজননক্ষম হয় না। এখনো পৃথিবীতে কম পক্ষে ২৩ প্রজাতির বানর আছে, পৃথিবীতে মানুষ প্রজাতি মাত্র একটি। সেই এক প্রজাতির মানুষ, বানরের ২৩ প্রজাতির কোনো প্রজাতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে? মানুষের সাথে বানরের জেনেটিক পার্থক্য অনেক। পার্থক্য আছে আলফা হিমোগস্লোবিনে, সাইটোক্রোম-সি-এর অ্যামিনো অ্যাসিড সজ্জায়। কাজেই বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেও বানর থেকে মানুষের উদ্ভব যৌক্তিক নয়। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন ও তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন।
বানর থেকে যদি মানুষ এসে থাকে তা হলে প্রথমেই প্রশ্ন আসবে সেই প্রথম মানুষটি কি পুরুষ ছিল, না মহিলা ছিল? প্রথম মানুষ পুরুষ হয়ে থাকলে মহিলা মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল কখন? যখন বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়, তখন বানরের প্রজাতি ছিল কতটি? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারবে না।
বিবর্তন: ক্রমবিবর্তন সর্ব ক্ষেত্রেই চালু আছে। হজরত আদম আ: থেকে হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র ধর্মের বিবর্তন হয়েছে, মূল ধারা ও বক্তব্য ঠিক রেখে পর্যায়ক্রমিক সংযোজন ও প্রয়োজনীয় বিয়োজনের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম চূড়ান্তরূপে বলবৎ হয়েছে।
সৃষ্টি প্রক্রিয়াতেও আল্লাহ প্রথম আদি পরিবেশ অনুযায়ী সরল প্রকৃতির আদি জীব সৃষ্টি করেন। ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টির শেষ পর্যায়ে মানুষ সৃষ্ট করেন। এখানেও শত পরিবর্তনে জীবের মূল বৈশিষ্ট্য ডিএনএর গঠন প্রকৃতি, রেপ্লিকেশন পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ পদ্ধতি সঠিক রাখেন। পরিবর্তন এসেছে আমাদের কৃষি ব্যবস্থায়, শিক্ষাব্যবস্থায়, সামাজিক ব্যবস্থায়। এটি চলমান বিবর্তন।
জৈব বিবর্তনবাদ : জৈব বিবর্তনবাদ একটি ধারণা মাত্র, সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান শাখা নয়। যুক্তিসঙ্গত উপাত্ত দিয়ে এটিকে এখনো প্রমাণিত করা যায়নি, তবে এক শ্রেণীর মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহের জন্য। বিবর্তন প্রমাণ করা খুবই কঠিন, দুঃসাধ্য ও শ্রমসাধ্য। এর কারণ হলো: ১. সেই আদিকালে ফিরে যাওয়া কখনো সম্ভব নয়; ২. প্রাচীনকালের ঘটনাগুলো এখন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব নয় এবং ৩. ওই সময়কার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য দায়ী ফ্যাক্টরগুলো ফিরে দেখা বা ফিরিয়ে আনাও অসম্ভব।
বিবর্তনবাদের প্রবক্তা ডারউইন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পাখি দেখতে পান। তিনি ধারণা করেন, ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপের পরিবেশীয় ভিন্নতা এবং খাদ্যপ্রাপ্তি ও গ্রহণের কৌশলের ভিন্নতার কারণেই পাখিদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের (বিশেষ করে ঠোঁটের গঠন ও খাদ্য গ্রহণ) পরিবর্তন ঘটেছে। যখন তিনি প্রজাতি সৃষ্টির বিষয়ে গভীর চিন্তা করছিলেন, তখন তার ১১ বছরের আদরের মেয়েটির মৃত্যু ঘটে। এতে ডারউইন স্রষ্টার প্রতি সন্দিহান হয়ে প্রকৃতির প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি মনে করেন, প্রাকৃতিক কারণই এই ভিন্নতার জন্য দায়ী। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে এবং অন্যান্য কিছু উপাত্ত গ্রহণ করে তিনি একটি বই রচনা করেন ‘On the origin of species by means of natural selection’. বইটি ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত হয়। এর আগে ধারণা ছিল সব প্রজাতিই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট। ডারউইনের ধারণা হলো, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া প্রকৃতিও কিছু প্রজাতি সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখে।
ডারউইনবাদের মূল বিষয় হলো: ১. জীব অত্যধিক সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি করে; ২. প্রাকৃতিক সম্পদের (খাদ্য, আলো-বাতাস ইত্যাদি) সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন সৃষ্ট বংশধরদের মধ্যে খাদ্য, বাসস্থান ও অন্যান্য সম্পদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়; ৩. সেই প্রতিযোগিতায় কেবল উন্নত অভিযোজন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যোগ্য প্রতিযোগীরাই টিকে থাকে; ৪. সেই যোগ্য প্রতিযোগীদের উন্নত ও টেকসই বৈশিষ্ট্যগুলো বংশপরম্পরায় স্থানান্তরিত হয়; ৫. বহু বছরের ব্যবধানে এরা নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উৎকৃষ্ট প্রতিযোগীকেই প্রকৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন করে।
ডারউইনিজমে প্রজাতি সৃষ্টিতেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের ভ‚মিকা রয়েছে বলা হয়েছে। প্রজাতি হলো সর্বাধিক বৈশিষ্ট্যে মিলসম্পন্ন একদল জীব যারা নিজ দলের সদস্যদের সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে উর্বর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। অন্য প্রজাতির সদস্যদের সাথে এরা যৌন মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে প্রাপ্ত পাখিগুলোর মধ্যে ডারউইন কোনো ক্রস ব্রিডিং পরীক্ষা করেছিলেন বলে জানা যায় না। এ ছাড়া প্রজাতি একটি ধারণামাত্র। ব্যক্তি বিশেষে এই ধারণার কিছুটা রকমফের হয়। কেউ নিকট সম্পর্কযুক্ত কিছু প্রজাতিকে একত্র করে এক প্রজাতি করেন (Lumper), আবার কেউ কোনো কোনো প্রজাতিকে একাধিক প্রজাতিতে বিভক্ত করেন (Splitter).
ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ডারউইনের সেই ১৩ প্রজাতির পাখি একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। বলা হয়ে থাকে, আজ থেকে ১০ লাখ বছর আগে ৩০টি পাখির একটি ঝাঁক সেখানে এসেছিল যা থেকে ক্রম খাদ্য সঙ্কটের কারণে তারা বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতিতে রপ্ত হয়ে যায় এবং ক্রমান্বয়ে ১৩টি প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। Peter ও Rosemary Grant নামে বিজ্ঞানীদ্বয় ওই দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপে একটি পাখি প্রজাতি নিয়ে ৩০ বছর কাজ করছেন। তাদের মতে, ১৯৭৭ সালে সেখানে দীর্ঘ সময় খরা দেখা দেয় এবং খাদ্য ঘাটতি চরমে পৌঁছে। তখন ছোট ঠোঁটবিশিষ্ট পাখিগুলো খাদ্যাভাবে মরে যায় (কিন্তু পরিবর্তিত হয়ে অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়নি)। ডারউইনের পর্যবেক্ষণের পর গত প্রায় পৌনে ২০০ বছরে গ্যালাপাগোস দ্বীপে কোনো নতুন প্রজাতি সৃষ্টির বিষয় জানা যায়নি।
দীর্ঘ খরা বা দীর্ঘকালীন বন্যা বা জলাবদ্ধতায় অনেক প্রজাতি মরে যায় কিন্তু খরা প্রতিরোধী বা জলাবদ্ধতা প্রতিরোধী কিছু প্রজাতি বেঁচে থাকে। যাদের খরা বা জলাবদ্ধতা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য নেই তারা মরে যায় কিন্তু অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে টিকে থাকার উদাহরণ নেই। ইদানীংকালে অনেক রোগজীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে কিন্তু তারা নতুন প্রজাতিতে পরিণত হয়নি।
বিবর্তনবাদ অনুযায়ী আদি কোষী জীব (যেমন-E. coli, কলেরা ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি) থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের উন্নত জীবের উদ্ভব ঘটেছে, কিন্তু এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কোনটির পর কোনটির উদ্ভব হয়েছে- কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষেই তা বলা সম্ভব নয়।
বিবর্তনবাদ প্রমাণ করতে কার্বন ডেটিং, ডিএনএ গঠন, PCR প্রক্রিয়ায় R-RNA এর সজ্জাক্রম এবং এন্ডোসিমবায়োসিস প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়া হয় যা এখনও পূর্ণাঙ্গ সমর্থনযোগ্য পর্যায়ে আসেনি।
প্রজাতির অভ্যন্তরে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন না থাকলে বিবর্তন ঘটে না। জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরির ওপর পরিবেশ বা প্রকৃতির তেমন কোনো উলখযোগ্য ভূমিকা নেই। প্রজাতির ভেতরকার জেনেটিক ভ্যারিয়েশন সব সময়ই একটি সীমার মধ্যে থাকে, সীমা অতিক্রম করলে অন্য প্রজাতি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। সাধারণত অন্য গণে রূপান্তরিত হয় না।
নিশ্চয়ই জীব প্রজাতির ওপর পরিবেশ তথা প্রকৃতির কিছুটা ভূমিকা আছে, কিন্তু তা একটি সীমার ভেতরেই থাকে। পরিবেশের ভূমিকায় কোনো ধান প্রজাতির সৃষ্টি হলে তা ধানের পর্যায়েই পড়বে, আখ বা পাটের মতো হয়ে যাবে না। লাখ লাখ বছরে প্রকৃতি কোন প্রজাতির ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলেছে তা দেখার সৌভাগ্য কোনো একক বিজ্ঞানীর পক্ষে সম্ভব নয়। বাস্তবে নতুন প্রজাতি উদ্ভবের চেয়ে পুরনো প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ইতিহাসই চোখে পড়ে।
আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার প্রকার ধান থেকে বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা সৃষ্টি করা হয়েছে তা হাইব্রিডাইজেশন প্রক্রিয়াতে, প্রাকৃতিক নির্বাচনে নয়।
পৃথিবীর লাখ লাখ প্রজাতির (আদি থেকে উন্নত) একটির সাথে অপর একটির কোনো না কোনো মিল পাওয়া যাবেই, যেমন- এদের সবারই জীবন আছে, উত্তেজনায় সাড়া দেয়, প্রজননক্ষম ইত্যাদি। এদের ডিএনএ গঠন ও রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়া, জেনেটিক কোড সবই সর্বজনীন। এতে কেউ কেউ বলতে পারেন, আদি জীব থেকে উন্নত জীবের সৃষ্টি, যদিও এটি প্রমাণ করা সহজ নয়। এটি বলা সহজ যে, আদি-উন্নত সব জীব প্রজাতিই একক ¯ষ্টার সৃষ্টি, তাই এদের ডিএনএতে এত মিল।
আল্লাহ এখনো যখন ইচ্ছা নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করেন। ‘আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা যোগ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে সক্ষম।’(সূরা ফাতির, আয়াত-১)
আল্লাহ বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এই দু’য়ের মধ্যবর্তী সব কিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আহকাফ, আয়াত-৩)
যদি প্রকৃতির প্রজাতি সৃষ্টি করার মতো শক্তি থাকত, তাহলে কোটি কোটি বছরে জীবের ডিএনএর গঠন, রেপ্লিকেশ, প্রোটিন সংশ্লেষণ- এসব ক্ষেত্রে অনেক ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি হতো, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। কাজেই প্রজাতি সৃষ্টিতে প্রকৃতির ভূমিকা নগণ্য।
আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৪৯) অনেকেই এই জোড়াকে ডিএনএ ডবল হেলিক্সের সাথেই মিলিয়ে দেখেন। আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট বলেই সেই আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত ডিএনএ ডবল হেলিক্সের কোনো পরিবর্তন বা বিবর্তন নেই।
ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে বিশ্ববাসী এখন খুবই উদ্বিগ্ন। এখন তাদের চিন্তা কিভাবে বর্তমান জীব প্রজাতিগুলোকে ধরে রাখা যায়, বাঁচিয়ে রাখা যায়। নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হবে এমন চিন্তা কারো মাথায় আসে না।
শেষ কথা: মানুষের সৃষ্টি সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে বহু আয়াতে। মুসলমান (এবং ইহুদি, খ্রিষ্টান) তাদের ধর্মগ্রন্থে যা আছে তাই বিশ্বস করবেন। মনে রাখবেন কুরআনকে অখণ্ডভাবেই বিশ্বাস করতে হবে, আংশিক বিশ্বাস অবিশ্বাসেরই নামান্তর।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments